বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে এখনও হাহাকার অবস্থা রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে। স্থানভেদে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রায় ১১১ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে হস্তচালিত টিউবওয়েলগুলোতেও আর পানি উঠছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে কৃষি কাজের জন্য গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তোলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশেষ করে তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের বাসিন্দারা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে গভীর নলকূপ থেকে পানি এনে খাচ্ছেন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর তলানিতে নামায় বরেন্দ্র অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘ডাসকো ফাউন্ডেশন’। প্রতিষ্ঠানটির ‘সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডব্লিউআরএম) পরিচালিত জরিপে বাধাইড় ইউনিয়ন এলাকাকে নিরাপদ পানির অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৩৫টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভা নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। তাদের চিহ্নিত করা এলাকাগুলো হলো- তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভা, গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌরসভা। এ অঞ্চলের পানি সংকটে পড়া ১৫টি ইউনিয়ন হচ্ছে- রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড়, কলমা, পাঁচন্দর, গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর, পাকড়ি, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ও ঝিলিম ইউনিয়ন, নাচোল উপজেলার কসবা ও নেজামপুর ইউনিয়ন, ভোলাহাট উপজেলার দলদলি ইউনিয়ন এবং গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর, রহনপুর এবং রাধানগর ইউনিয়ন। ওই সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক যুগ আগেও উল্লিখিত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ৬০ থেকে ৯০ ফুট গভীরে পানি পাওয়া যেত। বর্তমানে তা ১৬০ ফুট বা তারও নিচে না গেলে পানি মিলছে না। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় বহু কষ্টে অন্য গ্রাম থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী ও শিশুদের। তানোরের মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার উপজাতি শিশু জেসি জানায়, সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে পাশের গ্রামে গভীর নলকূপে যায় পানি আনতে। কিন্তু আধা ঘণ্টার মধ্যেই পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাই লম্বা লাইন। লড়াই করে পানি নিতে হয়। দুপুরে মা যান পানি আনতে। কিন্তু রাতে আবার আমাকে যেতে হয়।

Link