বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার বাঁধাইড় ইউনিয়নকে ওয়াটার ট্রেস এরিয়া (পানি সংকটপূর্ণ ইউনিয়ন) ঘোষণা করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর তলানিতে নামায় বরেন্দ্র অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা গবেষণা সংস্থা ‘ডাসকো ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডাব্লুউআরএম) জরিপে বাধাইড় ইউনিয়ন এলাকাকে নিরাপদ পানির অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংস্থাটি ওই ইউনিয়ন এলাকায় সব গভীর নলকূপ থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করতে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রস্তাবনা পাঠালে যে কোনো সময় বাধাইড় ইউনিয়ন থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করার ঘোষণা আসতে পারে সরকারের পক্ষে থেকে। পরিবেশবিদরা এই পানি সংকটের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ স্থাপন করে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনকে অনেকাংশে দায়ী করেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১২৪টি উপজেলা নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল। ১৯৮৫ সাল থেকে বিএমডিএ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু করে। বরেন্দ্র অঞ্চল ১৫ হাজার ১০৫টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে উঁচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, নিয়মতপুর ও পত্নীতলা উপজেলা। এসব উঁচু এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এত নিচে নেমেছে যে গত কয়েক বছরে বিএমডিএর প্রায় ১৮০টি গভীর নলকূপ পুরোটা বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি এক সেমিনারে বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী জানান, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষি মন্ত্রালয়ের নির্দেশ আছে যে, বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন করে আর গভীর নলকূপ স্থাপন করা যাবে না। বাঁধাইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, একযুগ আগেও ইউনিয়নে কূপ, টিউবওয়েল দিয়ে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় খাওয়ার পানি ব্যবহার করেছে সহজেই। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নামায় বর্তমানে ইউনিয়ন এলাকায় কূপ ও টিউবওয়েল পানি শূন্য হয়ে পড়ে আছে। এখানকার মানুষের একমাত্র খাওয়ার পানি ভরসা গভীর নলকূপ ও সাব-মার্সেবল পাম্প। তাও বেশি পানি ওঠে না। বিএমডিএ তানোর জোনের প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী জেলার অন্যসব ইউনিয়নের চেয়ে বাঁধাইড় ইউনিয়ন সবচেয়ে উঁচু অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পানির স্তর দ্রুত নিচে নামায় এ ইউনিয়নকে নিয়ে চিন্তিত বিএমডিএ। ধানের বদলে অন্য কোনো ফসল করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আইডাব্লুউআরএম’র মাঠ পর্যায়ের তানোর উপজেলার বাঁধাইড় ও মুন্ডমালা পৌরসভায় দায়িত্বে প্রাপ্ত কমিউনিটি মবিলাইর আগস্টিনা হাঁসদা জানান, ২০১৫ সাল থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৩৫টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভা নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। এসব পৌরসভা ও ইউনিয়নে পানির স্তর পরিমাপ কূপ বসানো হয়েছে। যা প্রতিমাসে দুবার করে মাপ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্রুত ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর বাধাইড় ইউনিয়ন এলাকায় নেমে যাচ্ছে। সংস্থাটির রাজশাহী অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, এক যুগ আগেও উল্লিখিত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ৬০ থেকে ৯০ ফুট গভীরে পানি পাওয়া যেত। বর্তমানে তা ১৬০ ফুট বা তারও নিচে না গেলে পানি মিলছে না। ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে অবস্থান করছে। ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকাগুলোতে দ্রুত গভীর নলকূপের পানি দিয়ে বোরো আবাদ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে পানির রিচার্জ করতে বিদ্যমান বড় পুকুর ও খাড়ি খনন করে ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। এই ইউনিয়নের পর দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে।