মো: মনিরুজ্জামান চৌধুরী (মিলন) : পত্নীতলা (নওগাঁ) থেকে; মাত্রার অতিরিক্ত পানি শোষন ও পরিবেশের উপর দ্রুত বিরুপ প্রভাব ফেলার কারনে বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল ইউক্যালিপট্যাস গাছ রোপনে সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও তা উপেক্ষা করে সাধারন জনগন অতিদ্রুত লাভবান হওয়ার আশায় এ গাছ রোপনে ব্যাপক ভাবে ঝুঁকে পড়ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু সর্বাপেক্ষা শুষ্ক এবং চরমভাবাপন্ন। দেশের অন্য সকল অঞ্চলের চেয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাত একেবারেই কম হয়। বাৎসরিক বৃষ্টিপাত অসমান, তারতম্য খুবই বেশি। বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি উপর থেকে নীচ দিকে ক্রমশ ঢালু। বরেন্দ্র এলাকার মাটি এঁটেল ও ক্ষেত্র বিশেষে এঁটেল দোঁ-আঁশ। এ এলাকার মাটির বিশেষত্ব হলো গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড শক্ত ও রসহীন থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে কাদাযুক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও ভোলার হাট, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর, সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা, দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, বিরামপুর ,হাকিমপুর, বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম, কাহালু, আদমদীঘি, জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, কালাই উপজেলার মৃত্তিকা খুবই এঁটেল ও কাদাযুক্ত। উপরের মাটির স্তর অগভীর। মাটির নীচের স্তর অত্যন্ত কঠিন এবং পানি অপ্রবেশযোগ্য। মাটিতে জৈবস্তর পরিমান অত্যন্ত কম। মাটির গঠন দূর্বল, অম্লভাবাপন্ন। বন্যামুক্ত এলাকা বিধায় বন্যা বাহিত পানি উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে না। অপ্রতুল বৃক্ষরাজি থাকায় বর্ষার পানি ঢালু বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে গড়িয়ে নদীতে চলে যায়। এ অঞ্চলে মাটিতে পানির ধারন ক্ষমতা খুবই কম। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি কোন কোন এলাকায় অম্লীয় প্রকৃতির হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে কয়েক দশক পূর্বে খননকৃত পুকুর - দীঘির সংখ্যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশী। সারা বছরে পানি ধরে রাখাই ছিল এ সকল পুকুর-দীঘি খননের মূল উদ্দেশ্য। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে অনেক পুকুর-দীঘি এখন ধানী জমিতে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের নদ-নদী হলো আত্রাই, মহানন্দা, করতোয়া, শিব, ছোট যমুনা, ট্যাংগন, নাগর, বড়াল, বার্ণাই, প্রভৃতি। বর্তমানে অনেক নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়ে মৃতব্রত প্রায়। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকট আরো তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নওগাঁ রিজিয়ন-২ পত্নীতলা এর নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসের একটি সূত্র জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সমস্যার কারনে ইউক্যালিপট্যাস গাছ রোপন সরকার নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছেন। কারণ হিসাবে সূত্র উল্লেখ করেন, এ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল হলেও অতিরিক্ত পানি বা মাটির রস শোষন ও অন্যান্য গাছের তুলনায় অনেক বেশী খাবার খেয়ে থাকে। ঠাঁ, ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলে এ গাছ রোপন আরো বেশী ক্ষতিকর। এ গাছ পরিবেশ বান্ধব নয় ও এতে কোন পাখি বাসা বাধে না এবং এ গাছের গোড়ায় সহজে অন্যান্য গাছ -পালা জন্মায় না। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে আখ চাষ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে চিনি ও গুড়ের উৎপাদন কমিয়ে আসছে। এ ঘাটতি পুরনের জন্য বিকল্প হিসাবে খেজুর ও তাল সহ আম গাছ বেশী বেশী রোপন করছে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বনবিভাগ পাইকবান্দা রেঞ্জ একজন কর্মকর্তা জানান বরেন্দ্র অঞ্চলে ইউক্যালিপট্যাস গাছরোপনে উল্লেখিত সমস্যা রয়েছে এবং ১৯৭৫/৭৬ সালে বনবিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা ডঃ মোঃ সামসুর রহমান সরকারী সফরে অষ্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সেখ্ান থেকে এ গাছের চারা আনয়ন করেন এবং এ দেশে পরীক্ষা মূলক ভাবে রোপন শুরু করেন। এ গাছ রোপনে চাষীরা দ্রুত লাভবান হওয়ার কারনে দ্রুত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র জানান এ গাছ রোপন সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে- কিনা তা আমার জানা নেই। তবে নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এ গাছ নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক এখন কোন গবেষনা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। সূত্র আরো জানান পাইকবান্দা এ রেঞ্জের আওতায় ৮৪০.৭৯ হেক্টর বনবিভাগের জমিতে প্রায় ২১ লাখ ২ হাজার গাছের মধ্যে ইউক্যালিপট্যাস গাছ রয়েছে ২৫ ভাগ। এ হিসাবে ৫ লাখ ২৫ হাজারের মত রয়েছে ইউক্যালিপট্যাস গাছ। নজিপুর বিট অফিসার আনিছুর রহমান জানান বন বিভাগ রোপিত গাছের ২৫ ভাগ এ গাছ রোপন করেছেন বলে আমার মনে হয় না। তবে অনুসন্ধানে জানাগেছে পত্নীতলা উপজেলা সদর নজিপুর পৌর এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় প্রায় ১৫ হাজার ইউক্যালিপট্যাস গাছ ২০০৯ সালেই রোপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাসহ বগুড়া জেলার আদমদীঘি, দুঁপচাচিয়া , কাহালু উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা সহ জমির আইলে, আইলে এ গাছ ব্যাপক ভাবে রোপনের দৃশ্য চোখে পড়ে।