রাজশাহীতে গতকাল বুধবার ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নগামিতার কারণ অনুসন্ধানে গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্য’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতি মাসে যে হারে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, সেই হারে আর পুনর্ভরণ হচ্ছে না।
নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং পানি অধিকার ফোরাম যৌথভাবে ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান।
বৈঠকে বলা হয়, অতীতে বরেন্দ্র এলাকায় শুধু বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি দিয়ে চাষাবাদ করা হতো। বেশ কয়েক বছর থেকে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশেষ করে গোদাগাড়ী, তানোর ও নিয়ামতপুর উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি মাসে ০.০০৪ থেকে ০.০২৮ হারে নিম্নগামী হচ্ছে, যা পানি পুনর্ভরণ অপেক্ষা অধিক মাত্রায় উত্তোলন করার চিত্র প্রকাশ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নওগাঁর নিয়ামতপুর, সাপাহার এবং পোরশা উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের গড় অবস্থান ১৯৯৪ সালে হ্রাস পেতে থাকে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি। গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১৯৯১ সালের পর থেকে নিম্নগামী হওয়া শুরু হয়। ২০০২ সালের পর আর তা আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি।
বরেন্দ্র এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত মাত্রায় উত্তোলনের ফলে পানির স্তর ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন প্রকারের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এই এলাকায় বর্ষা মৌসুমে খাড়িতে (বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক নালা) এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের তাগিদ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া খাড়ির উজানে ক্রসড্যাম নির্মাণ করে পানি সংরক্ষণ করে বরেন্দ্র এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমানোর সুপারিশ করা হয়। এ জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিএমডিএ) স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক জলাধারে পানি সংরক্ষণের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একতরফাভাবে উজানে পদ্মা নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ।’ দেশের কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএমডিএর চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক আহসান জাকির, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়ামুল বারী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সাবেক মহাপরিচালক ইনামুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। Link