দেশের সাড়ে ৯ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য জানিয়ে বলছে, বাংলাদেশের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে। কারণ ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ৯৭ ভাগ মানুষের পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হলেও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে না পারার কারণে এবং মৌসুম ভেদে পানি সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে, শিল্পোন্নয়ন ও কৃষি কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অতিমাত্রায় নগরায়ন ও অসচেতনতার ফলে পানির অপচয় বাড়ছে। গৃহস্থালি কাজে, শহরে, কল-কারখানায় হচ্ছে পানির অপচয়। এর পাশাপাশি এসব কাজে পানি দূষিত হচ্ছে। সেই দূষিত পানি জমিতে যাচ্ছে। যাচ্ছে নদীতে। এই পানির অপচয় ও বর্জ্যযুক্ত পানি নদীতে যাওয়া ঠেকাতে হবে। বিশ্বজুড়েই এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এই বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব পানি দিবস’। বিশ্ব পানি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কেন পানির অপচয়’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিনটি। পানি আমাদের জীবন ধারণের জন্য খুবই অপরিহার্য একটি সম্পদ। আর এই দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ পানি, পানি সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলা। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে খ্যাত হলেও আজো দেশের সব মানুষের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং কৃষিসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা যায়নি।
এদিকে জাতিসংঘ বলছে, পানির অপচয় রোধ করে আর দূষিত পানিকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। এসডিজি অর্জনে সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের পানির অপচয় রোধ করা যাচ্ছে না। যাচ্ছে না নদী দূষণ বন্ধ করা। ঢাকার আশপাশে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীর পানি মারাত্মক দূষণের শিকার। এর ফলে রোগ যেমন ছড়াচ্ছে তেমনি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিও করছে পরিবেশের।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ায় যেমন পরিবেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে তেমনি বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্য নদীর দূষিত পানি এই পানির স্তরে প্রবেশ করছে। এতে ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর তিন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং খুলনা বিভাগে কৃষি কাজের জন্য গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে অতি মাত্রায় পানি আহরণ করা হচ্ছে। সেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমে নদীর প্রবাহ দ্রুত শুকিয়ে যায়। গঙ্গা- মেঘনা - ব্রহ্মপুত্র (জেএমবি বেসিন) এই তিন অববাহিকার পানিই বাংলাদেশের মিঠা পানির প্রধান উত্স। বাংলাদেশের নদীর মূল স্রোতধারার প্রধান অংশ আসে ভারত হয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে আসায় বাংলাদেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। পানির অভাবে চোখের সামনে দেশজুড়ে জালের মতো বিছিয়ে থাকা সব নদী একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। যা দেশকে স্থায়ী মরুকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
এর পাশাপাশি অপরিকল্পিত নদীশাসন, বাঁধ নির্মাণ, বড় নদীগুলোর সঙ্গে ছোট শাখা নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রতিকূল পরিবেশ প্রভৃতি কারণেও নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো প্রচণ্ড হুমকির মুখোমুখি। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো মৃতপ্রায়। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন। নদীর পানি হয়ে উঠেছে কালো আলকাতরার মতো। পদ্মা, তিস্তা এখন মৃতপ্রায়, মেঘনার কোনো কোনো অংশের পানি কালো রং ধরেছে, যুমনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা দখল ও দূষণের ভারে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে।