পানির অপর নাম জীবন হলেও পানি পান করেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছেন বহু মানুষ। গতকাল বিশ্ব পানি দিবসে উদ্বেগের বিষয়, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধাবঞ্চিত। ঢাকা ওয়াসা নিজ আওতাভুক্ত এলাকায় দৈনিক চাহিদা ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটারের বেশি জোগান দিলেও বেশিরভাগ পানিই বিশুদ্ধ নয়। ওয়াসা মূলত শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা থেকে পানি সংগ্রহ করে সরবরাহ করে; কিন্তু নদী দুটির পানি এত বেশি দূষিত যে, নানা রাসায়নিক দিয়ে নিষ্কাশিত ওয়াসার পানি বাসায় দীর্ঘক্ষণ ফোটানোর পরও দুর্গন্ধ থেকেই যাচ্ছে। এ ছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সেচ ও শিল্প-কারখানায় অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাজধানীর বাইরেও বরেন্দ্র এবং পার্বত্য অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার উঠেছে। জানা গেছে, জনগণের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ৩৫টি সংস্থার; কিন্তু বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। এর পেছনে অন্যতম কারণ তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এর সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। বিশুদ্ধ পানির নামে জারে করে সাধারণ পানিই তারা বিক্রি করছে চড়া দামে। এমনকি ওয়াসার সাধারণ ও অগভীর নলকূপের পানি বিশুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আমরা মনে করি, পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলার অবকাশ নেই। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি ভেজাল পানি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও নদী দূষণ রোধে টাস্কফোর্স গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার। নদীমাতৃক ও প্রবল বৃষ্টির দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দুর্ভাগ্যজনকই বটে। পানি জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য হওয়ায় প্রকৃতি তা ফ্রি করে দিয়েছে; কিন্তু দূষণের পেছনের হাত তো মানুষেরই। বিশুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় পানির অভাব ভবিষ্যতে এতই প্রকট হতে পারে যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে। এ কারণে পানির ইস্যুটিকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। পানি সংকট দূর করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমানো, নদী-সাগর ও ভূপৃষ্ঠের অন্যান্য উৎসের পানি সেচ ও কারখানার কাজে ব্যবহার এবং নদ-নদী দূষণ ও দখল ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে করে ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির লক্ষ্য পূরণ করা যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

Link