বিএনএস : বৃহত্তর রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে গত এক দশকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে প্রায় ৭০ ফুট। যার প্রভাবে এই অঞ্চলের অগভীর নলকূপগুলো শুষ্ক মওসুমে অকেজো থাকে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় খাবার পানির তীব্র সংকট। ফলে বাড়ির মহিলারা স্থানীয় পুকুরের দূষিত পানি বা পার্শ্ববর্তী কোন গ্রামের নলকূপের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।  পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি দেখা দেয় জনদুর্ভোগ। বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চালানো জরিপের তথ্য মতে, প্রতি বছর এই উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্থানভেদে ৭-১০ ফুট পর্যন্ত নিচে নামছে। বিশেষ করে ২০০৫ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নামছে। পদ্মার পাড় ঘেঁষা এই উপজেলাতেই ভূ-গর্ভস্থ পানির এমন হাল হলে, বরেন্দ্র অঞ্চলের তানোর, নাচোল, গোমস্তাপুর, সাপাহার ও পোরশাসহ অন্য উপজেলাগুলোর চিত্র আরো হতাশাজনক, এমনটিই বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে কোনো কোনো এলাকায় পানির স্তর ১১০-১১৫ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। আবার সে অনুযায়ী বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর বাড়ছে না। অন্যদিকে ভারতের একতরফা ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে শুষ্ক মওসুমে পদ্মা নদীতেও তেমন পানি থাকছে না। ফলে প্রচন্ড খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে একবার পানির স্তর নিচে নামলে তা আর ওপরে উঠছেনা। গোদাগাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অসিত কুমার কর্মকার জানিয়েছেন, গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০০৫ সালের জুন মাসে পানির স্তর ছিল মাটির ৪০ ফুট গভীরে। ২০০৬ সালে ৪৬ ফুট, ২০০৭ সালে ৪৯ ফুট, ২০০৮ সালে ৫৩ দশমিক ৭ ফুট, ২০০৯ সালে ৫৪ দশমিক ৯ ফুট, ২০১০ সালে ৬২ দশমিক ১ ফুট, ২০১১ সালে ৬১ ফুট, ২০১২ সালে ৭৫ ফুট, ২০১৩ সালে ৮৫ দশমিক ৮ ফুট এবং গত বছরের জুন মাসে গোদাগাড়ীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ছিল মাটির ৯৬ দশমিক ৪ ফুট গভীরে। বর্তমানে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকা ভেদে পানির স্তর রয়েছে মাটির ১১০-১১৫ ফুট গভীরে। অর্থাৎ এক দশকে পানির স্তর প্রায় ৭০ ফুট নিচে নেমেছে। তিনি আরো জানান, গোদাগাড়ী সদর, পাকড়ি, রিশিকুল, দেওপাড়া ও বাসুদেবপুর ইউনিয়নে তুলনামুলক পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নিচে। তবে পানির স্তর সবচেয়ে বেশি ওপরে রয়েছে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে। পদ্মার  কোলঘেঁষা বিচ্ছিন্ন এই চরে মাটির মাত্র ৪০ ফুট  নিচেই ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর পাওয়া যায়। এদিকে পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যাওয়ায়  গোদাগাড়ীতে এখন আর কোনো অগভীর টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে না। গোদাগাড়ীর প্রায় ১০ হাজার অগভীর টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোনো কোনো গ্রামে গভীর নলকূপ না থাকায় আদিবাসী নারীদের পাশের গ্রাম থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। উপজেলার তেলীবাড়ি গ্রামের আদিবাসী নারী সান্তনা ওঁরাও জানান, তাদের গ্রামে প্রায় ৫০টির মতো আদিবাসী পরিবারের বসবাস। কিন্তু ওই গ্রামে কোনো গভীর টিউবওয়েল নেই। অগভীর টিউবওয়েল দিয়ে পানি ওঠে না, তাই দেড় কিলোমিটার দূরের একটি বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ থেকে তাদের খাবার পানি সরবরাহ করতে হয়। Link