রেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশে, খরা সহনশীল ও পানি সাশ্রয়ী বিলুপ্ত প্রায় ১২ জাতের রবিশস্যের মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের ওমড় পাড়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বড়গাছি কৃষক ঐক্যের যৌথ উদ্যোগে এ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
বিকালে এ উপলক্ষ্যে পবা উপজেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী প্রায় শতাধিক নারী ও পুরুষ কৃষক পরীক্ষণ প্লট পরিদর্শন শেষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় সভাপ্রধান হিসেবে ছিলেন বড়গাছি কৃষক ঐক্যের সভাপ্রধান ও চারবার কৃষিতে জাতীয় পদক প্রাপ্ত কৃষক আব্দুর রহিম। বক্তব্য দেন কৃষক নেতৃত্বে রবিশস্যের পরীক্ষণ প্লটের পরিচালনাকারী কৃষক রহিমা বেগম, শ্রী মতি ববিতা রানী, জুয়েল রানা, আঃ জব্বার মিয়া, নীলা বেগম,শাহারা খাতুন, পবা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল, সমাজ সেবক আবদুল হক, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, কৃষিবিদ অমৃত কুমার সরকারসহ প্রমুখ ।
পরীক্ষণ প্লটের প্রধান পরিচালনাকারী কৃষক মোঃ রায়হান জুয়েল বলেন, আমাদের চাহিদানুযায়ী রবিশস্যের জাত গুজি তিল, তিসি, কাউন, কুসুম , যব, কালি জিরা, বাকলা কালাই, জাউন, শলুক, মশুর, ধনিয়া, খেসারিসহ মোট ১২টি জাত পরীক্ষণ প্লটের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে চাষ উপযোগীতার পরীক্ষা করা হয়। নভেম্বরের, ২০১৬ শেষ সপ্তাহে বীজগুলো বপন করা হয়। বীজগুলো গজানোর পর থেকে নিয়মিত সকলে মিলে পরিচর্চা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করি আমদের মতো করে। সাড়ে তিনমাস শেষে সকল ফসল পরিপক্ক হয়েছে । এ পর্যন্ত কোন ধরনের রোগ পোকার আক্রমণ হয়নি। ফসলে কোন ধরনের রাসায়নিক সার এবং বিষ দেয়া হয়নি। কেবল গোবর সার দেয়া হয়েছে। বপনের পর থেকে দুইবার ঝরনার মাধ্যমে অল্প পরিমানে সেচ দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন এখানে অনেক গুলো ফসল পাপাশি চাষ করায় কোন ধরনের পোকার আক্রমণ হয়নি। শীতের সময় এবার মাঝে মাঝে প্রচুর শীত ও কুয়াশাও ফসলগুলোকে কাবু করতে পারেনি। পরিশেষে আমরা দেখতে পাচ্ছি বারোটি জাতই অনেক সুন্দর হয়েছে এবং আমাদের আশানুরুপ ফলন দিবে। ”
প্রবীণ কৃষাণী মোসা: শাহার খাতুন বলেন, আমরা নারীরা একসময় এই ফসলগুলো সংরক্ষণ করতাম, প্রতিবছর আবাদ করা হতো। সেসময় এতো পানি তোলার যন্ত্র ছিলো না, সেচের ব্যবস্থাও ছিলো না, তাই এই খরা সহনশীল ও পানি সাশ্রয়ী জাতগুলোর চাষ করতাম। কিন্তু দিনে দিনে জাতগুলো হারিয়ে যাবার ফলে তা আর চাষ করতে পারি না।
পবা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল বলেন ১৫ থেকে ২০ আগেও এই জাতগুলোর চাষ হতো, এগুলো চাষে খরচও কম, দামও ভালো পাওয়া যায়। একমুখী শস্য ফসলের পরিবর্তনে এই জাতগুলো অনেক ভূমিকা পালন করবে।” বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কৃষকদের চাহিদানুযায়ী বারসিক গাইবান্ধার খরাপ্রবণ চর কৃষকদের সাথে যোগাযোগ সমন্বয়ের ফলে উক্ত জাতগুলো এখানে প্রথম পরীক্ষামূলক কৃষক নেতৃত্বে চাষ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, একদিকে যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক অভিঘাত, অন্যদিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈরী আবহাওয়া ও খরার প্রবনতা বেড়ে যাওয়াসহ পানি সংকট দেখে যাচ্ছে। উক্ত জাতগুলো এই সময়ে ভালো ফলাফল দিয়েছে। কৃষকগণ জাতগুলো আগামীতে আরো বড়ো পরিসরে চাষাদ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। ”