বিভাগীয় প্রতিনিধি, রাজশাহী: বরেন্দ্র অঞ্চলে গত দুই দশকে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকহারে নিচে নেমে গেছে। মাত্রা অতিরিক্ত এ পানির ব্যবহারের কারণে এমন পরিস্থিতি। নিকট সময়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট চরমে উঠবে এমন আশঙ্কা পরিবেশবাদিরা দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছেন। ইতোমধ্যেই উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। খরার মৌসুমে মিলছে না জমিতে সেচ দেয়ার পানিও। পানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে এ অঞ্চলের ১৮০টি গভীর নলকুপ। সেচ সংকটে খরার সময় কয়েক হাজার হেক্টর জমি পতিত পড়ে থাকছে। ২০১৪ সালের ডাসকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডাব্লুউআরএম) নামে একটি প্রকল্প জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে যে, পানির স্তর ক্রমাগতভাবে নিচে নামায় বরেন্দ্র অঞ্চলের তিনটি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ানকে মিঠাপানি সংকট হতে পারে। অতি ঝুঁকিপুর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওইসব এলাকাকে। ডাসকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডাব্লুউআরএম) নামে একটি প্রকল্প জরিপ চালিয়ে এসব এলাকা চিহ্নিত করেছে। এমন সংকটের কথা মাথায় রেখে অবশেষে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কূয়া খনন করে ভূ-গর্ভস্থ পানির রিচার্জ করার উদ্যোগ নিয়েছে ডাসকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডাব্লুউআরএম), বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)ও এনজিও ফোরাম। বিএমডিএ তথ্য মতে, বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি ভূগর্ভের রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলে ৫৫০টি কূয়া খনন করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে প্রকল্পটি কাজ শুরু হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের উচুঁ এলাকা হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর, গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর, নওগাঁ নিয়ামতপুর, পোরশা ও পত্মীতলা উপজেলায় বিএমডিএর প্রকল্পটি কার্যক্রম চলছে। এসব কূয়ার বেশির ভাগ খনন করা হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া খাড়ির নিচের অংশে। এসব কূয়ার গভীরতা ৭০ থেকে ১২০ ফিট পর্যন্ত। খাড়িতে পানি জমা হলে কূয়ার মধ্যে দিয়ে ওই ভূ-গর্ভের অনেক ভেতরে চলে যায়। সেই থেকে পানি রিচার্জ হয়। অপর দিকে, ডাসকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডাব্লুউআরএম) সূত্র মতে, ২০১৪ সালে থেকে পরীক্ষামূলক ছাদে পড়া বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ভূগর্তে পানি স্তর বৃদ্ধি করার বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ৭টি স্থানে এ প্রকল্পটি করেছেন। আর এনজিও ফোরাম করেছের একটি। এ প্রকল্পে কারিগরী সহযোগিতা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ভূ-তত্ব ত্ত খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান। এ প্রকল্পে নিদিষ্ট জায়গায় কূয়া খনন করা হয়। এগুলোর গভীরতা ৯০ থেকে ১০০ ফিট। বাড়ি-ঘরের বৃষ্টির পানি সেখানে এসে জমা হয়। তা থেকে রিচার্জ হয় মাটির নিচের পানি। বিএমডিএ গোদাগাড়ী জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর বারী জানান, রিচার্জ অয়েল প্রকল্পটি ২০১৩ সালে গোদাগাড়ীতে প্রথম পরীক্ষামূলক ৩টি স্থানে কূয়া খনন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে গোদাগাড়ীর পর আনন্দপুর খালে শুরুর সময় ভূগর্ভস্থের পানি স্তর ছিল ৬৬ ফিট ১১ ইঞ্চি। ২০১৬ সালে মাপ অনুযায়ি সে খালের পানি রিচার্জ ওয়েলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ ঢুকে বেড়ে হয়েছে ৬৬ ফিট ৩ ইঞ্চি। গত তিন বছরে ৮ ইঞ্চি পানি স্তর উপরে এসেছে বলে এ প্রকৌশলীর। ডাসকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডাব্লুউআরএম) এর বরেন্দ্র অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রজেক্টর জাহাঙ্গীর আলম খাঁন জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থে থেকে অতিরিক্ত মিঠাপানি উত্তোলনের ফলে ক্রমগতভাবে পানির স্তর নিচে নামছে। তার প্রেক্ষিতেই ভবনের ছাদের পড়া বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ভূগর্ভে প্রেরণ করে পানির স্তর বৃদ্ধি করার লক্ষে প্রকল্পটি শুরু করেছেন তারা। তিনি আরো জানান, প্রকল্পটি শুরুর পর ভালই ফল পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এটি আরো বিস্তার করতে হলে সরকারসহ জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার যদি বিডিং কোড অনুযায়ি সকল বসত-বাড়ি ও ভবন নকশা করা সময় বাধ্যগতার আইন পাশ করে তাহলে সকল ভবনের ছাদের বৃষ্টির পানি পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচে পাঠানো যায়, তাহলে অতি সহজেই পানির স্তর বৃদ্ধি পাবে। ডাসকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইডাব্লুউআরএম) প্রকল্প মু-ুমালা পৌরসভা ও বাধাইড় ইউনিয়ন দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি মোবিলাইজার আগস্টিনা হাসদা জানান, পাঁচ মাস আগে তাদের মিটারে পানির লেয়ার ছিল ১০০ ফিট ১২ ইঞ্চি তলে। পাঁচ মাস পর বৃষ্টির পানি ঢুকে সোমবারে দেখা যায় সেটি ১০০ ফিট ৩ ইঞ্চিতে উঠে এসেছে। চলতি বছর এখানে পানি লেয়ার বেড়েছে ৯ ইঞ্চি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়(রাবি) ভূ-তত্ব ত্ত খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান জানান, ভবনের ছাদের বৃষ্টির পানি ভূগর্ভের স্তরের গিয়ে লেয়ার বৃদ্ধি পাবে এটা ঠিক আছে। এ প্রকল্পটি ফলে অনেক জায়গায় পানির লেয়ার বৃদ্ধি ও পাচ্ছে। তবে শুধু একটি জায়গায় লেয়ার বাড়লেই হবে না। বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক এলাকায় পানির সংকট। দেখতে হবে সাধারণ মানুষ তাতে কেমন সুবিধা পাবে। প্রকল্পটি বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। এদিকে বিএমডিএ যে রির্চাজ অয়ের খালে তৈরি করেছেন সে নিয়ে তিনি দ্বিমত পোষণ করেন। বিএমডিএ খালে মধ্যে রির্চাজ অয়েল করেছে তা খালের পানি কাদা ময়লাযুক্ত। সেই পানি ভূগর্ভের ভেতরে গিয়ে মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানি ভেতরে গিয়ে সম্প্রাসারণ হচ্ছে না। সে কারণে তাদের প্রকল্পটি সফল বয়ে আনবে কিনা বলা যাচ্ছে না।

Link

Link 2