বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। যা এই অঞ্চলের কৃষিসহ বিভিন্ন ৰেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ পরিসি’তির জন্য কৃষি ৰেত্রে ভূগর্ভস’ পানির অস্বাভাবিক ব্যবহারকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষিসহ বিভিন্ন ৰেত্রে খুব শিগগির ভূ-উপরিস’ পানির ব্যবহার না বাড়ানো গেলে পরিসি’তি আরও ভয়াবহ হবে।জনস্বাস’্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য মতে এই পরিসি’তি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তানোর, গোদাগাড়ী এবং পবার কিছু এলাকায়। এসব এলাকায় হাজার হাজার হস্তচালিত টিউবওয়েলগুলোতে এরই পানি উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উঠছেনা সেলো পাম্মগুলোতেও। সংশিৱষ্ট এলাকার অধিবাসীরা খাবার পানি সংগ্রহের জন্য এখন নির্ভর করছেন ডিপ সিলিন্ডার টিউবওয়েলগুলোর উপর। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপৰ (বিএমডিএ) চালিত গভীর নল-কূপগুলো বোরো জমিতে সেচ দিতে শুর্ব করায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। কৃষি বিভাগের তথধ্যমতে, প্রতিদিন রাজশাহীতে ৩,৪২২টি গভীর নলকূপ বোরো জমিতে সেচ দিচ্ছে। আর একারণেই অগভীর ও হস্তচালিত নলকূপগুলো পানি তুলতে পারছেনা। জনস্বাস’্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুত্রমতে, ২০১১ সালে তানোরে ভূ-গর্ভস’ পানির স্তর ছিল ৯৯ ফুট ১১ ইঞ্চি নিচে। ওই বছর রাজশাহীতে এটি ছিল সর্বোচ্চ নিচে। অথচ এই এলাকায় ২০০৭ সালে পানি পাওয়া যেতো ৫৩ ফুট ৪ ইঞ্চি নিচে। ২০১১ সালে গোদাগাড়িতে ভূ-গর্ভস’ পানির স্তর ছিল ৯৬ ফুট নিচে, যেখানে ২০০৭ সালে এই স্তর ছিল ৩৯ ফুট নিচে। পবার কিছু এলাকায়ও পানির স’র দ্র্বত নিচে নেমে যাচ্ছে বলে সংশিৱষ্ট দপ্তরটি জানিয়েছে। উপরের এই তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ভূ-গর্ভস’ পানির স্তর কি হারে নিচে নামছে এই অঞ্চলে। পানির স্তর এভাবে নিচে নামার পেছনের বিশেষ দায়ী হিসেবে সংশিৱষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভূ-উপরিস’ পানির ব্যব-হারের চেয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে অস্বাভাবিকহারে পানির উত্তোলন। এর পাশাপাশি পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়া এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতকে দায়ী করেছেন তারা। তারা আরো বলেছেন, এসব নেতিবাচক উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার পেছনে সার্বিক কারণ হিসেবে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনকে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। জনস্বাস’্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক বাহার উদ্দিন মৃধা এই পরিসি’তির জন্য ভূ-গর্ভস’ পানির অস্বাভাবিক ব্যবহারকে দায়ী করেন বড় করে দায়ী করে বলেন, এই সংকট থেকে উত্তরণে ভূ-উপরিস’ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির বিকল্প নেই। ভূ-উপরিস’ পানি ধরে রাখার জন্য তিনি এই অঞ্চলের খাল, নদী নালা, পুকুর, বিল-এসব পুনঃখননের পরা-মর্শ দেন। এছাড়াও কৃত্রিম উপায়ে ভূ-উপরিস’ পানি ধরে রেখে কৃষি কাজসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে ব্যবহারের পৰে মত দেন তিনি। বাহার উদ্দিন মৃধা আরও কিছু প্রস্তাবনা রাখেন যেগুলো এই সংকট থেকে উত্তরণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এগুলো হলো খরা সহিঞ্চু জাতের ধান ও অন্যান্য খরা সহনশীল জাতের ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে। যেগুলো কম সেচেই সম্পন্ন হতে পারে। এছাড়াও মানুষ তার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলেও ধান চাষেও উপর চাপ কমবে। কারণ ধান চাষেই সবচেয়ে বেশি ভূ-গর্ভস’ পানির ব্যবহার হয়ে থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. সারোয়ার জাহান সজল মনে করেন, ভূ-উপরিস’ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির লৰ্যে প্রস্তাবিত উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এতে এই অঞ্চলের অনেক অনাবাদী জমিও চাষের আওতায় আসবে। ভূ-গর্ভস’ পানির উপর একদিকে যেমন চাপ কমবে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও রৰা হবে। রাজশাহী রৰা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোঃ লিয়াকত আলী ভূ-গর্ভস’ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অবহিত করে আসছি বরেন্দ্র অঞ্চলের এই সংকটের কথা। কিন’ কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। তিনি বলেন প্রস্তাবিত উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে এই সংকট উতরে যেতে পারে অনেকাংশে। বিশেষজ্ঞরা পদ্মায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়াকে এই পরিসি’তির জন্যও দায়ী করে থাকেন। তারা মনে করেন পদ্মায় পানির প্রবাহ যথেষ্ট না থাকায় এই অঞ্চলে ভূ-গর্ভসে’ পানির রিচার্জ ঠিক মতো হচ্ছেনা। ফলে সংকট বেড়েই যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক শাখা নদীও শুকিয়ে গেছে। সংশিৱষ্ট সুত্রমতে, পদ্মা রাজশাহী পয়েন্টে তার বিপদ সীমা (১৮.৫০ সেন্টিমিটার) অতিক্রম করেছিল সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এই বছর পদ্মায় পানির সর্বোচ্চ লেবেন রেকর্ড করা হয় ১৮.৮৬ সেন্টিমিটার। বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মায় পানির প্রবাহ যথেষ্ট না থাকায় এরই মধ্যে ৪৫ প্রজাতির মাছ ধংস হয়ে গেছে। আরও কিছু প্রজাতি ধংসের পথে। অনেক জেলে জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য পেশাও পরিবর্তন করে ফেলেছেন একই কারণে।

Link