বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতিবছর কমছে বোরোর আবাদ। সেচ সংকটের কারণে কৃষকরা বোরো ধান চাষের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষাবাদ শুরু করেছেন। তারপরও সুবিধা করতে না পারায় অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকছে জমি। গত ৫ বছরে এ অঞ্চলে অনাবাদি জমির পরিমাণও বাড়ছে। ফলে সবুজে ভরা বরেন্দ্র অঞ্চল শুষ্ক এলাকায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে চাষাবাদ ব্যর্থ হলে এ অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেচ সুবিধা না থাকায় শুধু বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে তারা দীর্ঘদিন ধরে আমন-রোপা আবাদ করে আসছিলেন। ১৯৮৪ সালের দিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয় এ অঞ্চলে। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা আমন-রোপার সঙ্গে বোরো ধানের আবাদও শুরু করেন। এতে এ অঞ্চলে ধান উৎপাদন বেড়ে যায়। কৃষকরা ধান চাষের পাশাপাশি উঁচু জমিতে গম, সরিষা ও শাকসবজি চাষ শুরু করেন।৫ বছরে অস্বাভাবিক হারে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সেচ সংকটের কবলে পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো আবাদ। রাজশাহীর গোদাগাড়ী কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত ৫ বছর ধরে কৃষকরা বোরো আবাদের জমির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় প্রতিবছর উপজেলায় বোরো আবাদ ৫ থেকে ৭ হাজার হেক্টর করে কমে যাচ্ছে। গতবছর উপজেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর। উপজেলার মহিশালবাড়ী গ্রামের কৃষক শামসুল হক জানায়_ সার, বীজ, কীটনাশকের মূল্য কম ও সরবরাহ বেশি থাকলেও সেচ সংকটের কারণে বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় ঘটছে। কৃষকরা বোরো আবাদ করে খরচ তুলতে না পারায় বোরো আবাদ থেকে সরে এসে জমিতে গম, সরিষা, ভুট্টা ও শাকসবজির চাষ করছেন। বোরোর পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করলেও সময়মতো সেচ সুবিধা না পাওয়ায় তার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। গভীর নলকূপগুলোর অধীন জমিগুলোতে সাময়িকভাবে সেচ সুবিধা পাওয়া গেলেও শুধু খরার কারণে আমন-রোপা ধানের উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটেছে। বিঘাপ্রতি ২০ মণের স্থলে সর্বোচ্চ ১৪ মণ ধান উৎপাদন হওয়ায় অধিকাংশ কৃষক উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।গোদাগাড়ী পৌরসভার কুঠিপাড়া গ্রামের কৃষক ইয়াহহিয়া জানান, গভীর নলকূপগুলোতে প্রথমদিকে বেশি পানি উঠলেও গত ৫-৬ বছর থেকে পানি কম উঠছে। ১ বিঘা জমিতে ১ ঘণ্টার স্থলে ২ ঘণ্টা সেচ দিতে হয়। গোদাগাড়ী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অসিত কুমার কর্মকার জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রথমদিকে ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচে গিয়ে পানির স্তর পাওয়া যেত। বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ ফুট নিচে গিয়ে পানির সন্ধান পাওয়া গেলেও কম পানি উঠছে। প্রতিবছর গড়ে ৫ থেকে ১০ ফুট করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গোদাগাড়ী জোনের সহকারী প্রকৌশলী শাহ মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভর করে প্রতিটি গভীর নলকূপের অধীনে আবাদি জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে সব কৃষককে সেচ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাইফুল আলম জানান, এ অঞ্চলে ধান, গম ও শাকসবজি উৎপাদনে সময়মতো জমিতে সেচের বিকল্প নেই।